Blood pressure

উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে যা জানা উচিত

ব্লাড প্রেসার পরিমাপ করার সহজ পদ্ধতি

উচ্চ রক্তচাপ কি? বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত এবং অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন

‘বাংলাদেশ জনমিতি স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮’-এর হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চার জনের একজন উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন।

দেশে তিন কোটির বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। আক্রান্তদের ৫৯ শতাংশ জানেনই না যে তাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। একাধিক সরকারি জরিপে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

এক দশকের বেশি সময় ধরে জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলে আসছেন যে, দেশে উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বাড়ছে। দীর্ঘস্থায়ী এই রোগের চিকিৎসায় প্রায় সারা জীবন ওষুধ সেবন করে যেতে হয়। চিকিৎসা ব্যয় অনেকের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

উচ্চ রক্ত চাপের লক্ষণ

উচ্চ রক্তচাপের বা হাই ব্লাড প্রেশার এর সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ সেরকম ভাবে প্রকাশ পায় না। তবে সাধারণ কিছু বিষয়  লক্ষ্য করা যায় যেমন ,প্রচণ্ড মাথাব্যথা, মাথা গরম হয়ে যাওয়া এবং মাথা ঘোরানো, ঘাড় ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, অল্পতেই রেগে যাওয়া বা অস্থির হয়ে শরীর কাঁপতে থাকা, রাতে ভালো ঘুম না হওয়া, মাঝে মধ্যে কানে শব্দ হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা  অনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা ।

রোগীর কোনো শারীরিক কষ্ট থাকে না। তাই এ রোগে কেউ ভুগছেন কিনা সেটা তিনি নিজে বুঝতে পারেন না। যখন উচ্চ রক্তচাপের জটিলতা-স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি নষ্ট হওয়া , চোখের সমস্যা এর যে কোনোটি হয় তখন রোগীর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।  তাই এ রোগ নির্ণয় করাই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ শারীরিক সমস্যা না থাকায় কেউ নিজের অর্থ ব্যয় করে প্রেসার কেমন আছে বা উচ্চ রক্তচাপ আছে কিনা তা দেখার জন্য চিকিৎসকের  কাছে যেতে চান না এবং কি নিয়মিত ব্লাড প্রেসার পরিমাপ করেনা না। 

আবার যদি কারও উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয় হয়, তবে প্রায় অর্ধেক রোগী নিয়মিত চিকিৎসা নেন না বা স্বাস্থ্য সেবা প্রদান কারীর  কাছে কোনো পরামর্শ নেন না । উচ্চ রক্তচাপ রোগীর ১ থেকে ৩ মাস পরপর কোনো সমস্যা না থাকলেও ফলোআপে থাকতে হয়, নিয়মিত প্রেসার চেক করতে হয় যে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আছে নাকি নেই। 

কি ভাবে বাসায় ব্লাড প্রেসার নির্নয় করবেন?

সহজ প্রযুক্তির যন্ত্র  স্ফিগমোম্যানোমিটার বা ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মনিটর  ব্যবহার করে নিজের রক্তচাপ নিজেই মাপা বা নির্ণয় করা যায়। পরিমাপ করার জন্য বিশেষায়িত জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মেশিন যা অটোমেটিক ভাবে রক্তচাপ নির্ণয় করে।  তবে ম্যানুয়াল রক্তচাপ মাপার যন্ত্রের ব্যবহার সমন্ধে কিছুটা শেখার আছে এবং তা সহজেই শেখা সম্ভব।

 বাংলাদেশের বাজারে খুব কম দামে ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্র গুলো পাওয়া যায় তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ বাসায় ব্লাড প্রেসার মেশিন ও ব্লাড গ্লুকোজ মনিটরিং মেশিন রাখা। যে কোনো সময় এটির প্রয়োজন হতে পারে। 

কী কী কারণে উচ্চ রক্তচাপ বা হয় ব্লাড প্রেসার হয়?

প্রায় ৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের সু -নির্দিষ্ট  কোনো কারণ জানা যায় না, একে প্রাইমারি বা অ্যাসেনশিয়াল রক্তচাপ বলে। সাধারণত বয়ষ্ক মানুষের উচ্চ রক্তচাপ বেশি হয়ে থাকে। কিছু কিছু বিষয় উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা বাড়ায়; যেমন উচ্চ রক্তচাপের বংশগত ধারাবাহিকতা আছে, যদি মা-বাবার উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে সন্তানেরও এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি নিকটাত্মীয়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও অন্যদের এ রোগের ঝুঁকি থাকে।

  • সাধারণত মানুষের ৪০ বছরের পর থেকে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে
  • অতিরিক্ত ওজন 
  • পরিবারে কারও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
  • নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম না করলে
  • প্রতিদিন ছয় গ্রাম অথবা এক চা চামচের বেশি লবণ খেলে
  • ধূমপান বা মদ্যপান বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য/পানীয় খেলে
  • দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা হলে
  • শারীরিক ও মানসিক চাপ থাকলে

এছাড়া  অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজনা, ভয়-ভীতি এবং মানসিক চাপের কারণেও রক্তচাপ সাময়িকভাবে বেড়ে যেতে পারে। যদি এই মানসিক চাপ অব্যাহত থাকে এবং রোগী ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারেন, তবে এই উচ্চ রক্তচাপ স্থায়ী রূপ নিতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে যা জানা উচিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *